রাতে ৮০০ মানুষের মুখে খাবার তুলে দেন গাজী ইয়াকুব

অসহায় দরিদ্র মানুষের জন্য নজিরবিহীন কাজ করে যাচ্ছেন মা’ওলানা গাজী ইয়াকুব। আর্তমানবতার সেবায় তিনি একজন সম্মুখসারির যোদ্ধা। ধ’র্ম, বর্ণ নির্বিশেষে যেখানেই বিপদগ্রস্ত মানুষের খবর পান সেখানেই তিনি ছুটে যান।
মা’ওলানা গাজী ইয়াকুবের প্রতিষ্ঠিত ‘তাকওয়া ফাউন্ডেশন’ মাসে দু’বার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ৮০০ থেকে এক হাজার অনাহারী মানুষের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। রাত ১১টার পর শুরু হয় এর কার্যক্রম।
এর আগে মিয়ানমা’রের আরাকান রাজ্য থেকে নি’পীড়িত মু’সলমানরা বাংলাদেশে আসার পর ব্যক্তিগতভাবে মা’ওলানা গাজী ইয়াকুব হাজির হন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। রোহিঙ্গাদের খাবার, কাপড় ও আর্থিক সহায়তাসহ তাদের জন্য ম’সজিদ, মাদরাসাও নির্মাণ করে দেন তিনি।
বৈশ্বিক মহামা’রী করো’নার সময়ও তার ভূমিকা প্রশংসিত হয়। তাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয় দেশের মূলধারার বিভিন্ন গণমাধ্যমে। মানবসেবায় নিজেকে আরো সম্পৃক্ত করতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘তাকওয়া ফাউন্ডেশন’।
বর্তমানে দেশের ৫৭টি জে’লায় এ সংগঠনের কার্যক্রম রয়েছে। যারা নিয়মিত অসহায় দরিদ্রদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। মা’ওলানা গাজী ইয়াকুব নয়া দিগন্ত অনলাইনকে বলেন, আম’রা গত ছ’মাস ধরে ঢাকার ফুটপাত, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন ও সদরঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় রাত ১১টার পর খাবার বিতরণ করে থাকি।
এমনকি যারা পতিতাবৃত্তিতে জ’ড়িত তারাও যদি আমাদের কাছে খাবার চান তাদেরকেও দিই। আবার যাদের পোশাক ভালো কিন্তু যেকোনো কারণে খাবার পাচ্ছেন না, তারা যদি খাবার চান, তাদেরকেও ফিরিয়ে দিই না।
তিনি আরো বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতা’লে যারা রোগীকে দেখাশোনা করার জন্য আসেন, সাধারণত ক্যান্টিন থেকে তাদের খাবার কিনে খেতে হয়, আম’রা তাদের মাঝেও খাবার বিতরণ করি।
গাজী ইয়াকুব বলেন, আমাদের বিতরণ করা খাবারের মধ্যে গরুর গোশত, মুরগীর গোশত বা ডিমসহ পুষ্টিকর উপাদান থাকে। গত ছয় মাসে কমপক্ষে ১২ হাজার মানুষের মাঝে বিনামূল্যে খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ছয় হাজার মানুষের মাঝে নগদ অর্থ ও খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। আর রমজান মাসে ৪৫ হাজার মানুষের মাঝে ইফতারি বিতরণ করা হয়েছে। করো’নায় মৃ’ত ছয় শতাধিক লা’শ দাফনকাজ সম্পন্নও করা হয়েছে।
জানা গেছে, করো’না সঙ্কটে ত্রাণকার্যক্রম ও লা’শ দাফনে সহায়তা করে অনেক প্রশংসিত হয়েছে মা’ওলানা গাজী ইয়াকুবের ‘তাকওয়া ফাউন্ডেশন’। করো’না সঙ্কট শুরু হওয়ার পর থেকে সংগঠনটি লিফলেট বিতরণ, শুকনো ও তৈরি খাবার বিতরণ, জীবাণুনাশক স্প্রে, লা’শ দাফনসহ বহু’মুখী সেবা দিয়েছে সাধারণ মানুষকে।
এ প্রসঙ্গে তাকওয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মা’ওলানা গাজী ইয়াকুব বলেন, ‘করো’নার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে এক লাখের বেশি সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করি। ম’সজিদের ওপর বিধি-নিষেধ আসার আগ পর্যন্ত প্রতিদিন প্রায় ২০০ ম’সজিদে স্যানিটাইজার তথা হ্যান্ডওয়াশ, ডেটল ও হেক্সিসল বিতরণ করেছি। একইসাথে প্রতিদিন ২৫০টি মেশিন দিয়ে রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী, কমলাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় জীবাণুনাশক স্প্রে করেছি। এসব স্থানে তৈরি খাবার বিতরণ করেছি। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ৩৭৬ আলেমকে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছি।
ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জে’লা ও উপজে’লায় ৩৮টি টিম গঠিত হয়েছিল করো’নায় মৃ’ত ব্যক্তিদের লা’শ দাফনে। তাকওয়া ফাউন্ডেশনের ওই স্বেচ্ছাসেবকদের মাঝে পিপিই সরবারহ করা হয়। তারা স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতিতে করো’না পজিটিভ ও করো’না উপসর্গ নিয়ে মৃ’ত্যুবরণকারীদের লা’শ দাফনে সহায়তা করেছেন। এভাবে নিয়মিত মানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছে মা’ওলানা গাজী ইয়াকুবের প্রতিষ্ঠিত তাকওয়া ফাউন্ডেশন।